আজ বুধবার, ১২ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৭শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

না.গঞ্জ ৪ আসনে দীর্ঘ হচ্ছে মনোয়নপ্রত্যাশীদের সারি

না.গঞ্জ ৪ আসনে দীর্ঘ হচ্ছে মনোয়নপ্রত্যাশীদের সারি

না.গঞ্জ ৪ আসনে দীর্ঘ হচ্ছে মনোয়নপ্রত্যাশীদের সারি

সংবাদচর্চা রিপোর্ট:

ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন গঠিত। জাতীয় ভাবে এ আসনটির মনিটরিং করা হয়। এখানে আ.লীগ- বিএনপি রয়েছে শক্তিশালী ভোট ব্যাংক।একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর আট মাস বাকি। এরই মধ্যে ভোটের হাওয়া বইতে শুরু করছে নারায়ণগঞ্জে। চায়ের দোকান, রেস্টুরেন্ট,হাট-বাজার,পাড়া-মহল্লায় সব জায়গাতে চলছে নির্বাচনী আলোচনা। প্রার্থীদের নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। তবে আ.লীগ- বিএনপি দুই দলের প্রায় হাফ ডজন মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতা এখনই লবিংয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে।
এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতা শামীম ওসমান।গত ৫ ই জানুয়ারীর নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দি¦তায় আওয়ামীলীগ থেকে তিনি নির্বাচিত হয়। নির্বাচিত হয়ে তিনি এ আসনে ব্যাপক উন্নয়ণমূলক কাজ করেছেন। ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় তিনি নানা কারণে বিতর্কীত হয়েছে। সম্প্রতি হকার ইস্যু নিয়ে সিটি মেয়র আইভীর উপর হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে শামীম ওসমানের নামে।
শামীম ওসমান যখন সমালোচনার মুখে ঠিক সেই সময় আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জাতীয় শ্রমিকলীগের কেন্দ্রীয় শ্রমিক উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক কাউছার আহমেদ পলাশের বাসায় হঠাৎ যায়। সেই থেকে শুরু হয় আগামী নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ ৪ আসনে কাউছার আহমেদ পলাশের নির্বাচনী মিশন।
আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে ইতোমধ্যে নিজের প্রার্থীতা ঘোষণা করেছেন শ্রমিক নেতা কাউছার আহমেদ পলাশ। গত ১১ এপ্রিল চাষাড়ায় এক শ্রমিক সমাবেশে পলাশ তার প্রার্থীতা ঘোষণা করেন।
জানা গেছে কাওছার আহমেদ পলাশের রয়েছে শক্তিশালী কর্মীবাহিনী। পলাশ সমর্থকরা ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জে ব্যানার ফেসটুনে ছেয়ে ফেলেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজেদের অবস্থানের জানান দিচ্ছে।
তাছাড়া নারায়ণগঞ্জ ৪ আসন থেকে শামীম ওসমানকে হঠাতে ঝটিকা মাঠে নেমেছে কেন্দ্রীয় আ.লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা উপকমিটির সদস্য কামাল মৃধা।
শনিবার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে নৌকার মাঝি নামে একটি সংগঠনের আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কামাল মৃধা বলেন-আমি মরি নাই, আমার বিরুদ্ধে ৩০টি মামলা, ২বার গুলি ও ৫ বার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে । আমার ৪০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে ২০ বছরই আমাকে রাজনীতি থেকে বাহিরে রাখা হয়েছে।
তিনি আগামী নির্বাচনে অংশ গ্রহণ প্রসঙ্গে বলেছেন, জীবন দিয়ে হলেও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করব।
তিনি বলেন, এ বছর ১৬ই জানুয়ারি একটা ঘটনা ঘটে হকার ইস্যুকে কেন্দ্র করে। এর পরদিন রাত ৯ টায় আমি ফোন পাই আমাকে আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা উপ-কমিটিতে স্থান দেয়া হয়েছে। আমি বিষ্মিত হয়েছিলাম, একি সঙ্গে বুঝতে পারি যে আমার কাছে নির্দেশনা এসেছে। আমি আমার গন্তব্য পেয়ে গেছি। তাই আমি নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে নির্বাচনে প্রার্থী হতে চাই।
এদিকে এরই মধ্যে নড়েচড়ে বসেছে একই আসনের সাবেক এমপি সারাহ বেগম কবরী। তিনি বিভিন্ন মিডিয়ায়,পত্র-পত্রিকায় নিজের প্রার্থীতা ঘোষণা করেছেন । তিনি বলেছেন এখনও আমি শামীম ওসমান থেকে বেশী জনপ্রিয় নারায়ণগঞ্জ শহরে।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে বিএনপির অংশগ্রহণের বিষয় এখনো ঠিক হয় নি। এছাড়া খালেদা জিয়াকে জেলখানা থেকে মুক্ত না করে বিএনপি আদও কি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কিনা .তা এখনও নিশ্চিত নয়। তবে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা লবিংয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে।
এ আসনের সাবেক এমপি গিয়াসউদ্দিন আ.লীগ থেকে ২০০১ সালের নির্বাচনের ২১ দিন আগে কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের সহ সভাপতির পদ ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দিয়ে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে শামীম ওসমানকে হারিয়ে এমপি নির্বাচিত হন।
গিয়াসউদ্দিনের নামে চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন সময় সরকারি দলের সাথে আতাতের অভিযোগ রয়েছে। বিএনপির দুঃসময়ে তাকে মাঠে দেখা যাচ্ছে না। তাই বিএনপি থেকে এই আসনে একাধিক প্রার্থীর নাম শুনা যাচ্ছে। বিএনপির একাধিক সুত্রের মাধ্যমে জানা গেছে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ রয়েছেন আগামী নির্বাচনে সম্ভাব্য মনোয়নপ্রত্যাশীদের তালিকায়।
অধ্যাপক মামুন মাহমুদ জেলা বিএনপির দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে নারায়ণগঞ্জ বিএনপিকে চাঙ্গা করে রেখেছেন। বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে তিনি রাজপথে সর্বদা কর্মীদের পাশে থাকছেন। ইতোমধ্যে তার নামে একাধিক মামলা হয়েছে। মামলায় কারাভোগও করেছেন। যার জন্য তিনি দলীয় হাইকমান্ড সহ কেন্দ্রীয় নেতাদের সু নজরে রয়েছেন।
এদিকে কল্যাণ পাটি থেকে বিএনপিতে আসা শাহ আলম গত নির্বাচনে সামন্য ভোটের ব্যবধানে সারাহ বেগম কবরীর কাছে পরাজিত হয়। তবে পরাজিত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত শাহ আলম বিএনপিতেই রয়েছেন। বিএনপির ডোনার হিসেবে খ্যাত শিল্পপতি শাহআলম ইতিমধ্যে তৃণমূল কর্মীদের বেশ আস্থা অর্জন করেছেন।
এদিকে জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে আ.লীগের একাধিক নেতাকর্মী মাঠে রয়েছে।যার জনপ্রিয়তা বেশি তাকেই আগামী নির্বাচনে টিকেট তুলে দেওয়া হবে জানা গেছে।
হারানো আসন ফিরে পেতে সক্রিয় হয়েছে উঠছে বিএনপি।তবে বিএনপির প্রার্থীদের নামে একাধিক মামলা থাকায় অনেকটা আতœগোপনে রয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছে,আগামী নির্বাচনে ফতুল্লা সিদ্ধিরগঞ্জে আ.লীগ বিএনপির হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। যদিও প্রধান দুই দলের কোন্দলসহ একাধিক প্রার্থী রয়েছে দলীয় প্রতীক পেলে তা সমাধান হবে।